ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক

সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান সমুহ

September 28, 2021
Sylhet-Attractive-Tourist-spots

সিলেট জেলায় প্রচুর পরিমানে দর্শনীয় স্থান রয়েছে।সবুজে মোড়ানো ছোট ছোট টিলার চা বাগানের দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধকরে।শীত কালে অথিতি পাখীদের কলকাকলিতে হাওর এলাকা ভরে উঠে।প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলো শহরের আশপাশেই।নিম্নে সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করা হলো।

১.মালনীছড়া চা বাগানঃ

সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান সমুহের মধ্চাযে অন্রযতম হলো মালনীছড়া চা বাগান।চার পাশে সবুজের সমারোহ। নীল আকাশের নিচে যেন সবুজ গালিচা পেতে আছে সজীব প্রকৃতি। উঁচু-নিচু টিলা এবং টিলাঘেরা সমতলে সবুজের চাষাবাদ। শুধু সবুজ আর সবুজ। মাঝে মাঝে টিলা বেষ্টিত ছোট ছোট জনপদ। পাহাড়ের কিনার ঘেষে ছুটে গেছে আকাবাঁকা মেঠোপথ। কোন যান্ত্রিক দূষণ নেই। কোথাও আবার ধাবমান পথে ছুটে চলছে রূপালী ঝর্ণাধারা। প্রকৃতির সকল সৌন্দর্যের সম্মিলন যেন মালনীছড়া চা বাগানে।

বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের বৃহত্তম এবং সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগান। যার নাম ‘মালনীছড়া চা বাগান।’ ইংরেজ সাহেব হার্ডসনের হাত ধরে ১৮৪৯ সালে ১৫০০ একর জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান মালনীছড়া। বাগানটি বর্তমানে পরিচলিত হচ্ছে বেসরকারি তত্ত্বাবধানে। ভ্রমনবিলাসী মানুষের কাছে আনন্দ ভ্রমণ কিংবা উচ্ছল সময় কাটানোর প্রথম পছন্দের স্থান হলো মালনীছড়া চা বাগান। সিলেট শহরের একেবারেই অদূরে হওয়ায় চা বাগান দেখতে পর্যটকরা প্রথমেই ছুটে যান মালনীছড়ায়। মালনীছড়া চা বাগানের প্রবেশদ্বার বেশ কয়েকটি। আপনি চাইলে যে কোন একটি পথ দিয়েই চা বাগান দর্শনের কাজ শুরু করতে পারেন। তবে ঝামেলা এড়াতে বাগানে প্রবেশের আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়াই বাঞ্চনীয়। তারপর ঘুরে দেখেন বাগানের এপাশ থেকে ওপাশ। দেখে আসতে পারেন বাগানের বাংলো। মালনীছড়ার পাশেই রয়েছে আলী বাহার চা বাগান। সিলেটের চায়ের রঙ, স্বাদ এবং সুবাস অতুলনীয়। উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান এটি। ১৮৪৯ সালে এই চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়।Maloni-chora-Lakkatura-tea-garden

অবস্থানঃ

মালনীছড়া চা বাগান সিলেট শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত।শহর থেকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর যাওয়ার পথের পাশেই বাগানটি অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থল জিন্দাবাজার পয়েন্ট হতে সিএনজি গাড়ীতে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ। ভাড়া জনপ্রতি ২০.০০টাকা হবে।

কি কি দেখবেন:

পাহাড়ের গায়ে চা বাগানের দৃশ্য, ছায়া বৃক্ষ, চা শ্রমিকদের আবাসস্থল, কমলার বাগান, রাবার বাগান, চা তৈরীর প্রক্রিয়া।পাশাপাশি দেখতে পারেন লাক্কাতুরা চা বাগান।

যাতায়াতঃ

সিলেট রেলওয়ে স্টেশন বা বাস স্টেশন থেকে দুরত্ব প্রায় ২৪ কিঃমি। ভাড়া অটো রক্সায় ৩৫০.০০-৪০০.০০ টাকা।

কোথায় অবস্থান করবেন:

সাধারনত চা বাগানে থাকার তেমন কোন সুব্যবস্থা নাই। আপনাকে সিলেট শহরেই থাকতে হবে। থাকার তথ্যর জন্য যোগাযোগ করতে পারে গ্রীণ সিলেট ট্যুরস এর সাথে।

২.রাতারগুলঃ

রাতারগুল জলাবন বা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট (ইংরেজি ভাষায়: Ratargul Swamp Forest) বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর, আর এর মধ্যে ৫০৪ একর বনকে ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।এটিও সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে একটি উল্যাখযোগ্য  দর্স্থাশনীয় স্থান।

এই মিঠাপানির জলাবনটিতে উদ্ভিদের দু’টো স্তর পরিলক্ষিত হয়। উপরের স্তরটি মূলত বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ নিয়ে গঠিত যেখানে নিচের স্তরটিতে ঘন পাটিপাতার (মুর্তা) আধিক্য বিদ্যমান । বনের উদ্ভিদের চাঁদোয়া সর্বোচ্চ ১৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত । এছাড়াও অরণ্যের ৮০ শতাংশ এলাকাই উদ্ভিদের আচ্ছাদনে আবৃত । বনের স্বাস্থ্য সন্তোষজনক । এখন পর্যন্ত এখানে সর্বমোট ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে ।

এই বন মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও পরবর্তিতে বাংলাদেশ বন বিভাগ, বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের জলসহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে। এছাড়া জলমগ্ন এই বনে রয়েছে হিজল, করচ আর বরুণ গাছ; আছে পিঠালি, অর্জুন, ছাতিম, গুটিজাম। আছে বট গাছও।

জলে নিম্নাংঙ্গ ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে বিভিন্ন সময়, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এখানে ভিড় করেন পর্যটকগণ। বনের ভিতর ভ্রমণ করতে দরকার হয় নৌকার, তবে সেগুলো হতে হয় ডিঙি নৌকা। ডিঙিতে চড়ে বনের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায় প্রকৃতির রূপসুধা।

এই বনের ভিতরে প্রবেশ করার তিনটি ঘাট রয়েছে। ১.মটর ঘাট ২.মাঝর ঘাট ৩. শেষের ঘাট।

এই তিনটি ঘাটের মধ্যে মাঝের ঘাটের মাধ্যমে প্রবেশ করাই উত্তম।কারন এ ঘাটের মাধ্যমে সহজে ও তাড়াতাড়ি বনে প্রবেশ করা যায়।এতে সময় কম লাগে। এ ঘাটের মাঝিরা পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে লাইফ জেকেট সরবরাহ করে।Ratargul

অবস্থানঃ

সিলেট শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর-পূর্বে গোয়াইঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট।

যাতায়াতঃ

সিলেট রেলওয়ে স্টেশন বা বাস স্টেশন থেকে দুরত্ব প্রায় ২১কিঃমি। ভাড়া নোহায় নিবে ৩৫০০.০০-৪০০০.০০টাকা।সময় লাগবে আনুমানিক১ থেকে১.৩০ঘন্টা।বারকি নৌকায় বনের মধ্যে ঘুরতে নিবে ১২০০.০০টাকা।

কোথায় অবস্থান করবেন:

বনে থাকার তেমন কোন সুব্যবস্থা নাই। আপনাকে সিলেট শহরেই থাকতে হবে। থাকার তথ্যর জন্য যোগাযোগ করতে পারে গ্রীণ সিলেট ট্যুরস এর সাথে।

৩.বিছনাকান্দিঃ

সিলেট জেলার নবীনতম ভ্রমণ গন্তব্য বিছনাকান্দি। জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রস্তুমপুর ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থানের অন্যতম এ জায়গা এখন পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। পাথর বিছানো বিস্তীর্ণ প্রান্তরের উপরে বয়ে চলা মেঘালয়ের পাহাড়ি ঝরনাধারা বিছনাকান্দির মূল আকর্ষণ।

বিছনাকান্দিতে পাথর-জলের বিছানা মুগ্ধ হওয়ার মতো। এখানে পাথরের বিছানার উপরে পাশের পাহাড় থেকে অনবরত স্বচ্ছ পানির ধারা বহমান। তবে বর্ষায় পানির প্রবাহ বেড়ে যায় কয়েকগুন। এ সময়ে মূল ধারায় স্রোত অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে।বিছনাকান্দির বিছানা বাংলাদেশ আর ভারত মিলিয়ে। স্বাভাবিক ভাবে সীমানা চিহ্ণিত করা নেই এখানে। জায়গাটিতে তাই সাবধানে বেড়ানো উচিৎ। বাংলাদেশ অংশ ছেড়ে ভারত অংশে চলে যাওয়া মোটেই নিরাপদ নয়। সাঁতার জানা না থাকলে এ ভ্রমণে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নেওয়া উচিৎ।Bisnakandi

কীভাবে যাবেনঃ

সিলেট শহর থেকে অটো রিকশায় প্রথমে যেতে হবে হাদারপাড়। হাদারপাড়ে যাওয়ার সহজ পথ হল শহর থেকে মালনিছড়ার পথে ওসমানী বিমান বন্দরের পেছনের ভোলাগঞ্জের সড়ক ধরে।সিলেট শহর থেকে হাদারপাড়ের যাওয়া আসার অটো রিকশা ভাড়া ১ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। একটি অটো রিকশায় সর্বোচ্চ পাঁচজন যাওয়া যায়। সময় লাগবে আনুমানিক ১.৩০ থেকে ২.০০ঘন্টা।

হাদারপাড় বাজারের পোস্ট অফিস ঘাট থেকে বিছনাকান্দি যাওয়ার রিজার্ভ পর্যটক নৌকা পাওয়া যাবে। ১০ থেকে ২০ জন চলার উপযোগী একটি নৌকার ভাড়া ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা।

কোথায় থাকবেনঃ

বিছনাকান্দি ও আশপাশে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। সিলেট শহর থেকে খুব সকালে গিয়ে সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে থাকতে হবে সিলেট শহরেই। এ শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে।

৪.ভোলাগঞ্জঃ

অসাধারণ প্রাকৃতিক শোভার স্থান ভোলাগঞ্জ। সঙ্গে বাড়তি পাওনা ধলাই নদীর সৌন্দর্য। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে সিলেটের ভোলাগঞ্জের কাছে এসে আবার সে ভারতের মেঘালয় পর্বতমালার কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর পর অক্টোবর মাস পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ বেড়াতে যাওয়ার সেরা সময়। এখানে ধলাই নদীর রূপ, সারি সারি পাথর তোলার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, সবুজ পাহাড় বন্দি সাদা পাথর আর পাহাড় থেকে পাথর ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়া স্ফটিক স্বচ্ছ জল যে দেখবে, সে-ই মুগ্ধ হবে। তারপর এখানকার সাদা পাথরের স্বচ্ছ জলে গোসল করে একটা দিন দারুণভাবে কাটিয়ে দেয়া যায়। সিলেট জেলার দর্শনীয় এই স্থানে।Bhulagonj

যাতায়াতঃ

সিলেট রেলওয়ে স্টেশন বা বাস স্টেশন থেকে দুরত্ব প্রায় ৪২কিঃমি। ভাড়া নোহায় নিবে ৩০০০.০০-৩৫০০.০০টাকা।সময় লাগবে আনুমানিক১ থেকে১.৩০ঘন্টা।

কোথায় থাকবেনঃ

ভোলাগঞ্জে ও আশপাশে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। সিলেট শহর থেকে খুব সকালে গিয়ে সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে থাকতে হবে সিলেট শহরেই। এ শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে।

৫.খাদিম নগর জাতীয় উদ্যানঃ

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান যেখানে গেলে ফিরে আসতে মন চাইবে না। ইচ্ছে হবে সেখানে থেকে যাই। ঠিক এইরকম একটি স্থান হচ্ছে সিলেটের খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান। সেখানে গেলে দেখতে পারবেন আল্লাহর সৃষ্টির এক অপরূপ সৌন্দর্য।

সিলেট শহর থেকে জাফলং তামাবিল সড়কের বাঁ দিকে গেলেই খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে। এই উদ্যানের চা বাগান আর ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলের ঘনত্ব দেখে যে কোন মানুষের ভয় লাগতে পারে। তাই একা এই উদ্যানে বেশী দূর না যাওয়াই ভালো।

বাংলাদেশের যে কয়টি সংরক্ষিত বনাঞ্চল আছে তার মধ্যে খাদিমনগর নবীনতম। ২০০৬ সালে এটি জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্কের মর্যাদা দেওয়া হয়। এই বনের আয়তন প্রায় ৬৭৮ হেক্টর। ১৯৫৭ সালে এই বনকে রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করা হয়েছিল।

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে রয়েছে ছয়টি চা বাগান। বাগানগুলো হলো: ছড়াগাঙ্গ, হাবিবনগর, বরজান, কালাগুল, গুলনি ও খাদিমনগর। জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এই উদ্যানটির সংরক্ষণের দায়িত্বে আছে ইউএসএইড।

নিত্যদিনের কাজের ফাঁকে একটি দিন যদি ঘুরে আসেন সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে, তাহলে আপনি মনের ও চোখের প্রশান্তি পাবেন। পাহাড়ের পথে পথে সবুজ চা বাগান আর গাছগাছালি সত্যিই মনো মুগ্ধকর দৃশ্য। নয়নাভিরাম খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের অবারিত সবুজ আপনার ভ্রমণকে আরো আনন্দময় করে তুলবে।Khadim-Nogor

যাতায়াতঃট্রেনে বা বাসে করে চলে যান সিলেট শহরে। তারপর সেখান থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে যেতে পারেন বনে। তবে ফিরতি পথে সিএনজি পাবেন না, তাই যেই করে যাবেন সেটা না ছেড়ে রেখে দিতে পারেন। আর এজন্য চালকের নাম্বার রাখাটা জরুরী।সময় লাগবে আনুমানিক ১ঘন্টার মতো।

এই পথের অধিকাংশ কাঁচা ও ইট বিছানো হলে ও গাড়ী নিয়ে যাওয়া যায় তবে বৃষ্টি থাকলে সে ক্ষেত্রে সিএনজি নিয়ে যাওয়া ভালো। খাদিম চৌমুহনীতে ভাড়ার সিএনজি পাওয়া যায়।

বনে এন্ট্রি ফি ৩০ টাকা। পরিশেষে অনুরোধ, পরিবেশের প্রতি খেয়াল রাখবেন বেড়াতে গেলে।

কোথায় থাকবেনঃ

উদ্যানে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। সিলেট শহর থেকে খুব সকালে গিয়ে সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে থাকতে হবে সিলেট শহরেই। এ শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে।

৬.লালাখালঃ

সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর উপজেলায় স্বচ্ছ নীল পানির নদী ‘লালাখাল’। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। প্রকৃতিকে একান্তে অনুভব করার জন্য স্থানটি বেশ উপযোগী। পাহাড়ে ঘন সবুজ বন, নদী, চা-বাগান ও নানা জাতের বৃক্ষের সমাহার লালাখালজুড়ে। পানি আর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া এখানকার মানুষের জীবনযাত্রাও আপনাকে দেবে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। লালাখালে গেলে আদিবাসীদের সঙ্গে আপনার সখ্যের সুযোগও থাকছে! সবকিছু মিলিয়ে এলাকাটি পর্যটকদের কাছে বেশ প্রিয়, কাঙ্ক্ষিত ও প্রতীক্ষিত একটি স্থান। সড়কপথ, নৌপথ দুভাবেই যাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও নৌ ভ্রমণটা বেশি উপভোগ্য বলে এটাকেই বেছে নেয় অধিকাংশ পর্যটক। নৌপথে যেতে যেতে যেদিকে চোখ যায়, মুগ্ধতায় নেমে আসে মগ্নতা! নিশ্চিতভাবে কিছুক্ষণের জন্য আপনি কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যেতে চলছেন, এ খেয়াল হবেই না! ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। লালাখাল ভ্রমণের জন্য শীতের প্রথম ভাগটাই উপযুক্ত সময়। চাইলে বৃষ্টির দিনে ভ্রমণ করা যেতে পারে। তবে শীতের সময়টা বেশ নিরাপদ।সিলেট জেলার এ দর্শনীয় স্থান।Lalakhal

যাতায়াতঃ

সিলেট থেকে সড়কপথে সিলেট-তামাবিল সড়কে সারিঘাট এসে তার পর এক থেকে দেড় ঘণ্টার নৌ ভ্রমণ। ইঞ্জিনচালিত নৌযানের গতির ওপরে সেটা নির্ভর করে। সিলেট থেকে এলে সারিঘাট থেকে নৌকা ভাসাতে হয়। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে সারীঘাটের দুরত্ত্ব ৪০ কিলোমিটার ,সময় লাগবে ১.১৫মিনিট নোহা ভাড়া নিবে ২৫০০.০০-৩০০.০০টাকা

৭.জাফলংঃ

সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হল জাফলং।এটি সিলেট শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট থানার অন্তর্গত।

জাফলং এ আপনি কি দেখবেনঃ

ক.জৈন্তার রাজবাড়িঃ

জৈন্তা বাজারের কাছে অবস্থিত জৈন্তা রাজবাড়ি তে জৈন্তা রাজারা বাস করতেন। ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই রাজবাড়িতে অনেক পর্যটক আসেন জৈন্তা রাজাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে। চা বাগানে ঘেরা চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জৈন্তাপুর জাফলং থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

সিলেটের অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানের মত ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জৈন্তাপুর উপজেলা। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা যখন বৃটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত তখন একমাত্র জৈন্তাপুর ছিল স্বাধিন বাজ্য । ১৫০০-১৬০০ সাল পর্যন্ত একমাত্র খাসিয়া রাজারাই শাসন করেছেন জৈন্তাপুর রাজ্যকে ।জৈন্তাপুরের প্রাচীননিদর্শন জৈন্তা রাজবাড়ি , রাজপ্রাসাদ, রামসিংহের শাসনামলের সময় অনেক মূল্যবান পুরাকীর্তি ও তৎকালীন জৈন্তা রাজ্যের নানা স্থাপনা, মেঘাতিলক, কালাপাথর ও বিজয় সিংহ মহারাজার স্মৃতি মন্দিরসহ জৈন্তা রাজ্যের পুরাতন নিদর্শনগুলো এখনও রয়েছে । সিলেট তামাবিল সড়কের সারিঘাটে রাস্তার মাঝপথে অবস্থিত ঐতিহাসিক পান্থশালা দেখে পর্যটকদের মনে খুবই আনন্দ জাগে । জৈন্তার এই রাজবাড়ির ইতিহাসের জন্য জৈন্তাবাসী গর্বিত ।

খ.মায়াবী ঝর্ণাঃ

সাম্প্রতিককালে সিলেটে ঘুরে দেখার মত আরো কিছু নতুন দর্শনীয় স্থান উন্মোচিত হয়েছে। তেমনই একটি হলো সংগ্রামপুঞ্জি বা সেনগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা বা মায়াবী ঝর্ণা। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণাটি ভারতের সীমান্তে পড়েছে।songram-punji-jhorna-waterfall-jaflong

যাতায়াতঃ

সিলেট রেলওয়ে স্টেশন বা বাস স্টেশন থেকে দুরত্ব প্রায় ৭০কিঃমি। ভাড়া নোহায় নিবে ২৫০০.০০-৩০০০.০০টাকা।সময় লাগবে আনুমানিক১ থেকে১.৩০ঘন্টা।

কোথায় থাকবেনঃ

জাফলং এ থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। সিলেট শহর থেকে খুব সকালে গিয়ে সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে থাকতে হবে সিলেট শহরেই। এ শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে।

৮.হাকালুকি হাওরঃ

হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর। এটি মৌলভীবাজার সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারএবং মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুরী, কুলাউড়া উপজেলায় এর বিস্তৃতি। হাওরের আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর।এটি সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান সমুহের মধ্যে একটি অন্যতম স্থান।

বর্ষাকালে বিস্তৃত জলরাশি এ হাওরের রূপ ঠিক যেন ভাসমান সাগর। আদিগন্তু বিস্তৃত জলরাশি। জলের মাঝে মাঝে দুই-একটি বর্ষীয়ান হিজল, তমাল বৃক্ষ। অথচ শীতকালে বিস্তৃত এই হাওর ধু-ধু সবুজপ্রান্তর, কোথাও বা ধান ক্ষেত এবং খানাখন্দ নিচু ভূমিতে প্রায় ২৩৬টি বিলের সমষ্টি। হাকালুকি হাওর মাছের জন্য প্রসিদ্ধ। হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সংরক্ষিত জলাভূমি। শীত মৌসুমে এশিয়ার উত্তরাংশের সাইবেরিয়া থেকে প্রায় ২৫ প্রজাতির হাঁস এবং জলচর নানা পাখি পরিযায়ী হয়ে আসে। এছাড়া স্থানীয় প্রায় ১০০ প্রজাতির পাখি সারাবছর এখানে দেখা মেলে।Hakaluki-Haor

বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটককে দুর্বার আকর্ষণে রোমাঞ্চের হাতছানি দেয়। হাকালুকি হাওরে পরিযায়ী হাঁসের মধ্যে চখাচখী, রাজসরালী, গরাদমাথা রাজহাঁস, ধলাবেলে হাঁস, গাডওয়াল, ইউরেসীয় সিথীহাঁস, টিকিহাঁস, পাতিহাঁস ম্যার্গেঞ্জার প্রভৃতির দেখা মেলে। দেশি প্রজাতির মধ্যে বেগুনি কালেম, পানমুরসী, পাতিকুট, ডাহুক, ইউরেশীয় মুরগি চ্যাগা, ল্যাঞ্জা চ্যাগা, রাঙ্গাচ্যাগা, জলাপিপি, ময়ূরলেজা পিপি, পাতি জিরিয়া, হাট্টিটি, ভূবনচিল, শঙ্খচিল, বিলুপ্ত প্রায় কুড়াল ঈগল, বড়খোঁপা ডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি, খয়রা বক, ধূসর বক, শামুক খোল প্রভৃতি পাখি অন্যতম। হাকালুকি হাওরে অনেক প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। চিতল, আইড়, বাউশ, পাবদা, মাগুর, শিং, কৈ প্রভৃতি মাছ এখানে রয়েছে। জলজ উদ্ভিদের মধ্যে বিলুপ্ত প্রায় মাকনা হাওর অঞ্চলের পুটি, হিঙ্গাজুর, হাওয়া প্রভৃতি বিলে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান। এছাড়া শাপলা, শালুক, পদ্ম প্রভৃতি জলজ উদ্ভিদ ও আশাব্যঞ্জকহারে এখানে রয়েছে।

যাতায়াতঃ

ঢাকা থেকে ট্রেনে অথবা বাসে কুলাউড়া শহর। সেখান থেকে রিকশা যোগে পছন্দমতো বিলের নিকটমতো গ্রাম অতঃপর ট্রেকিং।

কোথায় থাকবেনঃ

হাওর এলাকায় বিল ইজারাদারদের দোচালা কুটিরগুলোয় দু‘চারজন পর্যটক থাকার জন্য চমৎকার। তবে অবশ্যই বিল মালিকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। সবচেয়ে ভালো হয় বিল এলাকায় তাঁবু ফেলে রাত্রি যাপন। জোছনা রাতে তাঁবুতে যাপন, পাখি পর্যবেক্ষণ যে কোনও অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটককে বিমোহিত করবে।

৯.লোভাছড়াঃ

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চল লোভাছড়া। লোভাছড়া মুলতঃ একটি পাথর কোয়ারী, এ ছাড়া এখানে অনেক পুরনো একটি চাবাগান রয়েছে।Luvachora

যাতায়াতঃ

লোভাছড়া যাওয়ার অনেক রাস্তা রয়েছে,তার মধ্যে একটি হলো সিলেট জাফলং মহাসড়কের দরবস্ত বাজার দিয়ে কানাইঘাটের নৌকা ঘাট।এ ঘাট থেকে থেকে নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করতে হয় লোভাছড়ার দিকে। নৌকা এগুতে থাকে পূর্ব দিকে। একটা পয়েন্টে এসে নৌকা পড়বে তিন নদীর মোহনায়। দক্ষিন থেকে এসেছে বরাক, উত্তর থেকে লোভা। এই দুই নদী মিশে সুরমা হিসেবে চলে গেছে পশ্চিমে। এই মোহনায় এসে নৌকা প্রবেশ করে স্বচ্ছ পানির নদী ‘লোভা’য়।

লোভা নদীর স্বচ্ছ কাঁচের মতো পানিতে দূরবর্তী পাহাড় সারির ছায়া এক মোহময় দৃশ্যের জন্ম দেয়। নদীর তীর থেকে উঁচু পাহাড়ের ঢাল পর্যন্ত বিস্তৃত লোভাছড়া চা বাগান।সীমান্তরক্ষীদের অনুমতিসাপেক্ষের লোভা নদীর উৎসমুখে গেলে পর্যটকদের চোখে পড়বে সীমান্তের ওপাড়ে দুই পাহাড়ের সংযোগকারী দীর্ঘ ঝুলন্ত ব্রীজ।কানাইঘাট থেকে লোভাছড়া নৌকায় যেতে সময় লাগবে প্রায় দেড়ঘণ্টা।

কোথায় থাকবেনঃ

সেখানে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। সিলেট শহর থেকে খুব সকালে গিয়ে সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে থাকতে হবে সিলেট শহরেই।

সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান সমুহে আপনার ভ্রমণ নিরাপদ ও আনন্দে কাঠুক এ প্রত্যাশা করছি।

এছাড়াও দেখতে পারেন সিলেটের ঐতিহাসিক স্থান সমুহ।

You Might Also Like

No Comments

Leave a Reply